ঢাকাবুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ছাত্রলীগকে কেন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন

মো. মারুফ হোসেন
অক্টোবর ২৩, ২০২৪ ৯:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছিল তৎকালীন ছাত্রলীগ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা কর্মী শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সমগ্র বাংলাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করার কথা বলেছিলেন। নূরে আলম সিদ্দিকী ও তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১/১১ সময় সকল রাজবন্দীর মুক্তির জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এরকম হাজারো বীরত্ব গাথা ইতিহাস আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ছাত্রলীগ কাজ পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী। যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিল নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদ, আ.স.ম আব্দুর রব সহ অসংখ্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু সেই সংগঠনের দায়িত্ব আজ কাদের হাতে? একজন ধর্ষক, চাঁদাবাজ, ও খুনীর হাতে! 

লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি এরকম অসংখ্য ঘটনার কারণে ছাত্রলীগ তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযয়ে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ আছে ছাত্রলীগ নেতা বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ওই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছিল। ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কী তার কলঙ্ক  মোচন করতে পেরেছিল? সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘটে যাওয়া ধর্ষণ এই প্রথম নয়! এর আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একই কলঙ্কের সাক্ষী  হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক ও তার অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয় শত ধর্ষণ বা সেঞ্চুরি উৎসব উদযাপন করেছিল। ১৯৯৯ সালের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের পর মানিক ও তার অনুসারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিউদ্দিন কায়সার, মামুন, আসাদুজ্জামান, তাপস সহ আরো অনেক সাধারণ ছাত্র মারা গিয়েছিল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরিফুজ্জামান, নাসিম, সোহেল, ফারুক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়াদ রাব্বি হত্যা হয়েছিল ছাত্রলীগের হাতে। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শাহ পরানের মাজার ভ্রমন শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুরারিচাদ কলেজ ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের ঘটনায় ছয় জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় যাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০১২ সালের ২৬ মে ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্র গোষ্টির উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করে।  

সবচেয়ে হিংস্র ঘটনা ঘটেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে প্রকাশ্য দিবালোকে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সামনে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ সমমনা দলগুলোর ডাকা সরকার বিরোধী আন্দোলন  প্রতিহত করার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেদিন রাজপথের সক্রিয় ছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশ্বজিৎ অন্য দিনের মতো সেদিনও কর্মস্থলে রওনা হয়েছিল। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিশ্বজিতের উপর হামলা করে। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা বিশ্বজিৎকে আঘাত করার সময় বলেছিল তুই শিবির করিস। সেদিন বিশ্বজিৎ তাদেরকে বুঝাতে পারেনি সে শিবির করে না। এরকম হাজারো ঘটনা রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের হামলায় ৩৩ জন দাধারন মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ১৫০০ জন গুরুতর আহত হয়েছিল। হত্যার সেই সংখ্যা ২০১৪ থেজে ২০২৪ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়ায় ১২৯ জন। যেখানে শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই ৩১ জন নিহত হয়। যে সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানুষ হত্যায় জড়িত তাদেরকে নিষিদ্ধ করা প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের দাবি। 

লেখক: ব্যাংকার ও সমাজকর্মী

hmmaruf1991@gmail.com

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।